Health

কুষ্ঠ রোগের লক্ষণ ও উপসর্গ এবং প্রতিকার জেনে নিন

যখন আমরা কুষ্ঠ (Kushtho) রোগের নাম শুনি তখন আমাদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। আজকের এই আর্টিকেলে আমি আপনাকে কুষ্ঠ রোগের লক্ষণ ও উপসর্গ এবং প্রতিকার নিয়ে আলোচনা করব। তবে ধাপে ধাপে জেনে নিন এই কুষ্ঠ রোগ কি, কুষ্ঠ রোগের উপসর্গ, কুষ্ঠ রোগ কিসের মাধ্যমে ছড়ায়, প্রতিকারের উপায় সহ কুষ্ঠ রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে। 

মূলত যখন কোন একজন ব্যক্তি এই কুষ্ঠ রোগ নামক দূরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়। তখন সেই ব্যক্তির ত্বকের মধ্যে এক ধরনের পচন শুরু হয়। আর এই পচন ধরার কারণে আমরা সেই মানুষ গুলো কে অনেকটা ঘৃণার চোখে দেখি। তবে এই কাজটা করা কখনোই ঠিক নয়। বরং আমাদের বুঝতে হবে, যে ব্যক্তি গুলো এই রোগে আক্রান্ত হয়। সেই ব্যক্তিরা কিন্তু কোন প্রকার পাপের ফলে এইরকম দুরারোগে আক্রান্ত হয় না। বরং এই কুষ্ঠ রোগ হল এক ধরনের জীবাণু বাহিত রোগ। চলুন তবে ধাপে ধাপে আলোচনা শুরু করা যাক।

কুষ্ঠ রোগ কি

আর্টিকেলের শুরুতেই আমি বলেছি যে, এই কুষ্ঠ রোগ হল এক ধরনের জীবাণু বাহিত রোগ। আর এই জীবানু গুলো মূলত ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে একজন ব্যক্তির শরীরে প্রবেশ করে থাকে। আর সেই ব্যাকটেরিয়ার নাম হলো মাইক্রো ব্যাকটেরিয়াম লেপ্রি। মূলত এই মারাত্মক ব্যাকটেরিয়া টি মানুষের ত্বকের মাধ্যমে দ্রুত পুরো শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। এবং ক্রমাগত ভাবে এই ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া একজন ব্যক্তির স্নায়ু থেকে শুরু করে শ্বাস প্রশ্বাসের নালী এমনকি চোখের ক্ষতি পর্যন্ত করে থাকে। আশাকরি আপনি কুষ্ঠ রোগ কি এ সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। পরবর্তী ধাপে থাকছে কুষ্ঠ রোগের লক্ষণ সমূহ নিয়ে আলোচনা। 

তবে অবাক করার মতো বিষয় হলো যে, এই কুষ্ঠ রোগ কিন্তু এক প্রকারের হয় না। বরং আপনি বিভিন্ন ধরনের কুষ্ঠ রোগ এর প্রকারভেদ দেখতে পারবেন। আর এই কুষ্ঠ রোগ মূলত অধিকাংশ সময় একজন ব্যক্তির শরীরের মধ্যে হাতের চামড়া দিয়ে সংক্রমণ শুরু করে থাকে। এবং এই সংক্রমনের সম্ভাবনা শুধুমাত্র প্রাপ্ত বয়স্কদের নয়। বরং বাচ্চা থেকে শুরু করে বয়স্ক ব্যক্তিদের মধ্যে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। 

See also  আমাশয় রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা পদ্ধতি

কুষ্ঠ রোগের লক্ষণ

উপরের আলোচনা থেকে আপনি জানতে পারলেন যে, কুষ্ঠ রোগ কি। এখন এই বিষয় টি সম্পর্কে ধারণা নেয়ার পাশাপাশি আপনাকে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে জানতে হবে। আর সেটি হল যে, কুষ্ঠ রোগের লক্ষণসমূহ কি কি। অর্থাৎ যদি কোন একজন ব্যক্তি এই দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়। তাহলে আপনি কোন কোন লক্ষণ গুলো দেখার পরে বুঝতে পারবেন যে। উক্ত ব্যক্তি আসলে কুষ্ঠ রোগের মত মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হয়েছে।

আর এই বিষয় টি বোঝার জন্য আপনাকে অবশ্যই কুষ্ঠ রোগের লক্ষণ সমূহ জেনে নিতে হবে। সে কারণে এবার আমি আপনাকে সেই লক্ষণ গুলোর সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়ার চেষ্টা করব। চলুন তবে দেখে নেওয়া যাক কুষ্ঠ রোগের লক্ষণ সমূহ:

  1. যেহেতু এই রোগের সংক্রমণ হাতের চামড়া দিয়ে শুরু হয়। তাই কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ত্বক অনেক শুষ্ক এবং রুক্ষ থাকবে।
  2. উক্ত রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির মাংসপেশী পূর্বের তুলনায় অনেক বেশি দুর্বল হয়ে পড়বে।
  3. সচারচর একজন সুস্থ ব্যক্তির ত্বকের উপর জ্বালা যন্ত্রণা অনুভব করে না। কিন্তু এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির ত্বকের উপর অনেক যন্ত্রণা পাবে।
  4. যখন এই রোগে একজন ব্যক্তি আক্রান্ত হবে। তখন সেই ব্যক্তির চুল উঠে যাওয়া শুরু করবে।
  5. এই লক্ষণ গুলোর পাশাপাশি কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির পায়ের পাতা এর নিচের অংশে প্রচুর পরিমাণে ঘা দেখতে পাওয়া যাবে।
  6. অধিকাংশ সময় দেখা যায় যে, উক্ত রোগে একজন কুষ্ঠ রোগীর নাক বন্ধ হয়ে যায়। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে সেই ব্যক্তির নাক দিয়ে রক্ত পড়তে থাকে।
  7. সর্বোপরি এই রোগে আক্রান্ত রোগীর শরীরের ত্বকের মধ্যে থাকা রঙের অনেকটা পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। কেননা তার ত্বক অনেকটা ফ্যাকাশে দাগ যুক্ত হয়। এর পাশাপাশি তার ত্বক ছোপ যুক্ত হয়ে থাকে।

তো যে লক্ষণ গুলো দেখার পর আপনি বুঝতে পারবেন যে, একজন ব্যক্তির শরীরে কুষ্ঠ রোগ হয়েছে কিনা। সেই লক্ষণ গুলো নিয়ে উপরে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। তবে এগুলো হলো প্রাথমিক লক্ষণ, যা দেখে আপনি অনুমান করতে পারবেন যে। একজন ব্যক্তি আসলে কুষ্ঠ রোগী আক্রান্ত হয়েছে কিনা।

See also  ডেঙ্গু রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা

আরো জানুন: টাইফয়েড জ্বরের লক্ষণ সমূহ এবং প্রতিকার সম্পর্কে

কুষ্ঠ রোগ কিসের মাধ্যমে ছড়ায়

এতক্ষণ ধরে আপনি জানতে পারলেন যে, কুষ্ঠ রোগ কি এবং কুষ্ঠ রোগের লক্ষণ সমূহ কি কি। আপনি যদি উপরের আলোচিত আলোচনা গুলো মনোযোগ দিয়ে পড়ে থাকেন। তাহলে আমার দীর্ঘ বিশ্বাস রয়েছে যে, এই বিষয় গুলো সম্পর্কে আপনার পরিষ্কার ধারণা চলে এসেছে। তবে অনেকের মনে এখন একটি প্রশ্ন জেগে থাকতে পারে। আর সেই প্রশ্ন টি হল যে, কুষ্ঠ রোগ কিসের মাধ্যমে ছড়ায়। চলুন এবং তাহলে সে সম্পর্কে একটু আলোকপাত করা যাক।

আর্টিকেলে শুরুতেই আমি আপনাকে একটা কথা বলেছি যে এই প্রশ্নটা হলো এক ধরনের জীবাণু বাহিত রোগ যেটি মূলত ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে একজন ব্যক্তির শরীরে প্রবেশ করে এবং যখন একজন ব্যক্তি শরীরে প্রবেশ করে তখন উক্ত ব্যক্তির হাতের চামড়ার পতনের মাধ্যমে সংক্রমণ শুরু হয়। আর ধীরে ধীরে সেই ব্যক্তির ত্বকের মধ্যে অনেকটা পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় যে লক্ষণগুলো নিয়ে আমি উপরে বিস্তারিত আলোচনা করেছি।

কুষ্ঠ রোগের চিকিৎসা গাইডলাইন

সচারচর কুষ্ঠ রোগ যে কোন মানুষের হতে পারে। একবারে শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ মানুষ পর্যন্ত এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে পূর্বের তুলনায় বর্তমান সময়ে এই রোগের প্রদুর্ভাব একটু হলেও কমেছে। বলা যায় কুষ্ঠ রোগ বর্তমান সময়ের জন্য বিরল একটি রোগ। আর সবচেয়ে ভালো লাগার মতো বিষয় হলো যে, বর্তমান সময়ে এই রোগের যথাযথ চিকিৎসা ব্যবস্থা রয়েছে। মূলত একজন ব্যক্তি যদি বর্তমান সময়ে কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। তাহলে সেই ব্যক্তি কে সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে পূর্বের মতো সুস্থ করে তোলা সম্ভব।

তো আমাদের মধ্যে এমন অনেক মানুষ আছেন। যারা মূলত কুষ্ঠ রোগের চিকিৎসা গাইডলাইন সম্পর্কে জানতে চায়। এখন সেই মানুষ গুলোর উদ্দেশ্যে আমি একটা কথা বলব যে। যখন কোন একজন ব্যক্তির কুষ্ঠ রোগ হবে। তখন অবশ্যই আপনাকে অভিজ্ঞ ডাক্তারের নিকট থেকে সঠিক চিকিৎসা নিতে হবে। আর যখন আপনি অভিজ্ঞ ডাক্তার নিকট যাবেন। তখন তারা কুষ্ঠ রোগের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া গুলো কে সঠিক এন্টিবায়োটিক এর মাধ্যমে দূর করতে পারবে।

See also  জেনেটিক রোগ কাদের বেশি হয় জেনে নিন

কিন্তু আপনি যদি কুষ্ঠ রোগের চিকিৎসা করার জন্য এই এন্টিবায়োটিক এর নাম জানতে চান। তাহলে এই বিষয়ে আমি আপনাকে কোন কিছু সাজেস্ট করতে পারবো না। কারণ ওষুধ আপনার তখনই সেবন করা উচিত, যখন আপনি একজন অভিজ্ঞ ডাক্তারের কাছ থেকে পরামর্শ নিবেন। আর যেহেতু আমি কোন চিকিৎসক নই, সেহেতু আমি আপনাকে কোন প্রকার ওষুধের নাম কিংবা এন্টিবায়োটিক এর নাম বলতে পারব না। সেজন্য অবশ্যই আপনাকে একজন অভিজ্ঞ ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে।

কুষ্ঠ রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা

দেখুন একজন ব্যক্তির কুষ্ঠ রোগ হওয়ার আগে এবং কুষ্ঠ রোগের লক্ষণ গুলো দেখার পরে বেশ কিছু ঘরোয়া চিকিৎসা নেওয়া যায়। যেমন,

  1. নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে যাতে করে সেই ব্যক্তির শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা পরিবেশ তুলনায় কয়েক গুণ বৃদ্ধি পায়।
  2. শুধুমাত্র কুষ্ঠ রোগের ক্ষেত্রে নয় বরং অন্যান্য রোগের হাত থেকে বাঁচার জন্য আমাদের অবশ্যই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে।
  3. যদি আপনি লক্ষ্য করে দেখেন যে, কোন একজন মানুষ কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত হয়েছে। তাহলে আপনি সেই ব্যক্তির থেকে একটু হলেও দূরে থাকার চেষ্টা করবেন।
  4. আর একজন ব্যক্তির শরীরের মধ্যে কুষ্ঠ রোগের লক্ষণ গুলো দেখার সাথে সাথেই অতি দ্রুততার সাথে ডক্টরের শরণাপন্ন হবেন।

যদিওবা কুষ্ঠ রোগের খুব কার্যকরী একটা ঘরোয়া চিকিৎসা নেই। তবে উপরে উল্লেখিত বিষয় গুলোর দিকে আপনার নজর রাখা উচিত। 

উপসংহার

প্রিয় পাঠক, আজকের এই কুষ্ঠ রোগের লক্ষণ ও উপসর্গ এবং প্রতিকার সম্পর্কিত আর্টিকেলের মাধ্যমে আমি আপনাকে কুষ্ঠ রোগ সম্পর্কে বিস্তারিত বলার চেষ্টা করেছি। আর আপনি যদি এই রোগ সম্পর্কে পরিষ্কার ভাবে সকল তথ্য জেনে নিতে চান। তাহলে আজকের এই আর্টিকেল টি আপনার জন্য অনেক বেশি প্রয়োজনীয়। আর স্বাস্থ্য রিলেটেড আরো অজানা কিছু জানতে চাইলে অবশ্যই নিচে কমেন্ট করে জানিয়ে দিবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button